বিকল্প চিনির সন্ধানে

বিকল্প চিনির সন্ধানেঃ 

আখের আখের রস থেকে প্রাথমিকভাবে প্রস্তত করা হয় ব্রাউন সুগার। পরবর্তীতে আরেক ধাপে প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে তৈরি করা হয় সাদা ধবধবে চিনি। দেখতে চোখ ভাল এবং সুস্বাদু হলেও চিনি প্রক্রিয়াকালিন এর মধ্যকার সব পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও চিনি সাদা করতে নানা ধরণের ক্যামিকাল মেশানো হয়।
সুগার বা চিনির অপকারিতা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনে স্পষ্ট হয়েছে।চিনি প্রস্তুতির পদ্ধতি মূলতঃ আঁখ/কেইন মাড়াই করে সাধারণতঃ ব্লিচিং এবং সালফোনেশন পদ্ধতিতে চিনি রিফাইন্ড করা হয় এবং সেই প্রক্রিয়ায় সালফার ব্যবহৃত হয়। একটি বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান সালফার  চিনি বা চিনিজাতীয় যেকোনো মিষ্টি দ্রব্য গ্রহনের মাধ্যমে দেহে ক্রমান্বয়ে অল্পঅল্প পরিমাণে মানব দেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া শিল্প-কারখানা রিফাইনিং পদ্ধতিতে আখের রস থেকে চিনি তৈরির সময় আখের বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদান আলাদা হয়ে যায়।ফলে দেহের জন্য এর তেমন কোন উপকারী প্রভাব থাকে না।অন্যদিকে দীর্ঘদিন চিনি গ্রহনের ফলে এটি অনেকটা মাদকের মতোই নেশায় পরিণত হয়।এল অপকারী দিকগুলো দেহে দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক খারাপ প্রভাব তৈরি করে।তাই ধরনের রিফাইন সুগার বর্জন করাটা এখন সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। তবে প্রশ্ন হলো তাহলে এর উৎকৃষ্ট বিকল্প কি হতে পারে?
পৃথিবীতে চিনির বিকল্প হিসেবে অনেক প্রাকৃতিক উপাদানই রয়েছে যেগুলো চিনির পরিপূরক হতে পারে। তবে স্বাদের দিক থেকে হুবহু চিনির মতো না হলেও এগুলোর অনেক হেলথ বেনিফিট রয়েছে। সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি চিন্তার করে এগুলো গ্রহনের জন্য মাইন্ড সেট-আপটা খুবই জরুরী। চিনির বিকল্প হিসাবে বাজারে রয়েছে অনেক উপাদান। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোঃ সোডিয়াম স্যাকারাইড, এ্যাসপারটেইম, নিওটেইমসহ হরেক পদের উপাদান। প্রচারানায় জিরোক্যাল, স্বাস্থ্যকর বলা হলেও এগুলোতে রয়েছে ক্যান্সারসহ দীর্ঘমেয়াদি নানানরকম মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই প্রাকৃতিক উৎসজাত এমন ৫টি খাবার যা চিনির মতো ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু মিষ্টি স্বাদের হয়-এমন স্বাস্থ্যবান্ধব উপাদানগুলোই বিশেষ বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হলো।

১) স্টেভিয়াঃ পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ হলো স্টেভিয়া। এর বৈজ্ঞানিক নাম Stevia rebaudiana এবং এটি Compositae পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী একটি উদ্ভিদ। স্টেভিয়া গাছের পাতার নির্যাস চিনির চেয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি। তবে সুখবর হল এর মধ্যে কোনো কার্বোহাইড্রেট কিংবা ক্যালরি নেই, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান। মূলতঃ এ গাছের মিষ্টি উপাদানের নাম হল Steviol গ্লাইকোসাইডস যা সংক্ষেপে Stevioside নামে পরিচিত। এই অগ্নাশয়ের বিটা কোষের সক্রিয়তার মাধ্যমে ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে এবং ব্লাড সুগার লেভেল কমিয়ে রাখে। এর সবুজ ও শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বোতলে সংরক্ষণ করেও ব্যবহার করা যায়।

২) মিছরি: মিছরির ব্যাবহার প্রাচীনকাল থেকেই। মিছরি স্বাস্থ্যের জন্য চিনির চেয়ে অনেক ভালো। এটি দেহ ঠান্ডা রাখে। করে। চিনিতে কোন প্রকার পুষ্টি উপাদান পাওয়া না গেলেও মিছরিতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিমান। কারণ মিছরি প্রস্তুতিতে চিনির মত রিফাইন করা হয় না। চিনির পরিপূরক হিসাবে খাবার সুমিষ্ট করার জন্য জন্য মিষ্টি, দই, হালুয়া, চায়ের সাথে ব্যবহার করা যায়। মিছরিতে ক্যালসিয়াম, ম্যগনেসিয়াম, আয়রন, ফাইভার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর পরিমানে। তুলনামূলকভাবে এটি চিনির একটি উত্তম পরিপূরক।

৩) গুড়: আদিকাল থেকেই চিনির পরিবর্তে গুড়ের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা। গুঁড়ের মধ্যে প্রোটিন ও মিনারেলস এর মাত্রা সব থেকে বেশি থাকে। এছাড়াও গুড় ক্ষারকীয় খাবার। দেহকে সুস্থ রাখতে ক্ষারকীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ন।

৪) মধু: মধু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মধু কখনও দূষিত হয় না। এটি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শরীরে পুষ্টি উপাদান জোগাতে সাহায্য করে থাকে। চিনির পরিবর্তে এই সব উপাদান ব্যবহার করে খাবারে মিষ্ট স্বাদ আনা যায়।

৫) কোকোনাট সুগার: নারিকেল থেকে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা হয়। কোকনাট সুগারও রিফাইন না করে তৈরি করা হয়। যার ফলে ক্ষতিকারক ক্যামিকালের পরিমাণ খুব কম থাকে। এতে সুগারের মধ্যে ক্যালরি থাকে। এটি সাধারণ চিনির থেকে অনেক হালকা এবং আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান থাকে।

৬) ডেট সুগার: মূলতঃ তৈরি হয় খেজুর থেকে এই ধরনের ডেট সুগার। হুম মেইড হিসাবে বাড়িতে বসে এটি তৈরি করা যায়। আবার মান বিবেচনা করে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকেও সংগ্রহ করা যায়। এটি পেটের সমস্য দূর করতে বেশ উপকারী। এতে আলাদা একটি ফ্লেভার থাকে ফলে একটি বৈশিষ্টময় গন্ধ থাকায় ডেট সুগার চা কিংবা কফিতে ব্যবহার করা যায়না। তবে চিনির বিকল্প হিসাবে অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা যায়।
পরিশেষে আমাদের নিজেদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা কি মুখরোচক এ ঘাতক চিনিই গ্রহন করবো! নাকি রসনার পরিতৃ্প্তির কিছুটা কম্প্রোমাইজ করে প্রাকৃতিক উৎসজাত কোন নিরাপদ বিকল্প খাবার অনুসন্ধান করবো?

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.